২০১০ সালে জীবিকার তাগিদে ইটভাটায় কাজ করতেন মোজাম্মেল হক। কিন্তু সে যে ইট ভাটায় ইট পোড়াতে সেখানে তাদের ইট তেমন লাল হতো না। এতে করে তাদের ইটের বিক্রিও কম হতো। যা নিয়ে সে সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়েন ইটভাটা মালিক।
কিন্তু সে সময়ের কোনও এক রাতে ‘ইটের রঙ লাল হওয়ার কৌশল’ স্বপ্ন দেখেন শ্রমিকদের একজন। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন একজন মানুষের লাশ! আর সেই লাশের ‘মাথা’ পোড়ালেই লাল হবে ইটের রঙ।
স্বপ্নের কথা শ্রমিকদের আলোচনার এক পর্যায়ে জেনে যান মালিক। এরপর তিনি শুরু করেন পরিকল্পনাও। চুক্তি হয় দুই লাখ টাকার। শ্রমিকের স্বপ্নের বলি হন ‘নিরীহ’ মোজাম্মেল। কোনো দোষ না করলেও তাকে হত্যা করে ইটভাটায় মাথা পুড়িয়ে দেন শ্রমিকরা। নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রায় এক ১২ বছর পর পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেককে এক হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক গাজী দেলোয়ার হোসেন এ রায় ঘোষণা করেন।
দণ্ডিতরা হলেন- জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বলাঞ্চা গ্রামের নজরুল ইসলাম, একই গ্রামের ইউনুস আলী ও সেকেন্দার আলী, উপজেলার চন্দন চৌহাট গ্রামের আব্দুল জলিল এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর বালিয়া গ্রামের কফিল উদ্দীন। এর মধ্যে সেকেন্দার ও ইউসুফ পলাতক রয়েছেন।
মামলার বরাত দিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল হামিদ বলেন, ২০১০ সালে ভুট্টাক্ষেতে একটি মাথাবিহীন লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় একটি মামলা করেন বালিয়াডাঙ্গী থানার তৎকালীন এসআই আতিকুল ইসলাম। মামলার তদন্তভার একই থানার আরেক এসআই আতিকুল ইসলামকে দেওয়া হয়। তিনি সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করেন। ওই ব্যক্তির দেওয়া তথ্যে একটি ইটভাটা থেকে মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশের তদন্তের পর সিআইডি থেকেও এ মামলার তদন্ত হয়। পরে আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। তদন্তকালে ১৬৪ ধারায় মোজাম্মেলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন আসামি ইউনুস আলী, আব্দুল জলিল ও কফিল উদ্দীন।
আব্দুল হামিদ আরো বলেন, মোজাম্মেল বালিয়াডাঙ্গীর একটি ইটভাটায় শ্রমিক হিসবে কাজ করতেন। সেখানে শ্রমিকদের একজন স্বপ্ন দেখেন ইটভাটায় মাথা পোড়ালে ইটের রঙ লাল হবে। এ কথা ওই শ্রমিক মালিককে জানান।
কয়েকদিন পরে এক রাতে সিনেমা দেখতে যান সব শ্রমিক৷ ফেরার পথে গভীর রাতে পরিকল্পিতভাবে মোজাম্মেলকে গলা কাটেন আসামিরা৷ পরে সে মাথা ইটভাটায় পোড়ান তারা।
আইনজীবী বলেন, মোজাম্মেলকে হত্যা করতে ভাটা মালিকের সঙ্গে দুই লাখ টাকার চুক্তি হয়। অগ্রিম ৪০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে হত্যা করেন সাজা পাওয়া আসামিরা। হত্যা মামলায় মোট ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।